E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাহাড়ী-বাঙ্গালীর সম্প্রীতি রক্ষায় অশুভ শক্তির বিনাশের আহবান

২০১৫ এপ্রিল ১৫ ১০:২৯:০৯
পাহাড়ী-বাঙ্গালীর সম্প্রীতি রক্ষায় অশুভ শক্তির বিনাশের আহবান

বান্দরবান প্রতিনিধি:বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধ মুর্তি স্নান অনুষ্ঠান পাহাড়ী-বাঙ্গালীর সম্প্রীতি রক্ষা এবং অশুভ শক্তির বিনাশ সাধনের আহবানের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবছর মাহা সাংগ্রাই পোয়ে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন সাঙ্গু নদীর পাড়ে এই পুণ্যানুষ্ঠান উদযাপিত হয়ে আসছে আদিকাল থেকে।

এটি মারমা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অংশ। পুরানো বছরের সকল দুঃখ, কষ্ট, ব্যাথা-বেদনা জাতিগত ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে নতুন বছরকে আলিঙ্গন করে সুখী সমৃদ্ধি ও সুন্দর জীবন গড়ে তোলাই সাংগ্রাই উৎসবের মুল মন্ত্র। তাই নানা আয়োজনে পাহাড়ে পালিত হয় বর্ষ বিদায় ও বরণ উৎসব সাংগ্রাই।

বৌদ্ধ মুর্তি গুলো যেমন বিহারে সংরক্ষন করতে গিয়ে ধুলো ময়লা জমে তেমনি মানুষের ভীতরেও নানা ধরনের ময়লা জমে কলুষিত হয়। পবিত্র বুদ্ধ মুর্তি গুলোকে বছরান্তে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চন্দন কাঠের পানি ও দুধ দিয়ে ধুঁয়ে পরিস্কার ও পবিত্র করা হয়। গৌতম বুদ্ধের সময়কাল থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এই রীতি ধারাবাহিক ভাবে চলে আসছে। এই বুদ্ধ মুর্তি স্নানের মাধ্যমে মানুষ জাতিও যেন অতীতের সকল দুঃখ কষ্ট আর গ্লানি ও অহিংসা পরিহার করে ভালকর্মের দ্বারা নতুন জীবনকে প্রস্ফুটিত করার শিক্ষা অর্জন করতে পারে। মঙ্গলবার বিকেলে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার থেকে খালি পায়ে পদভ্রঞ্জের মাথায় একটি পাত্রে বুদ্ধ মুর্তি স্থাপন করে প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক পথ অতিক্রম করে সাঙ্গু নদীর পাড়ে বুদ্ধ মুর্তি স্নান অনুষ্ঠানের আনুষ্টানিকতা শুরু হয়। পুণ্য লাভের আশায় প্রচন্ড গরম রাস্তায় খালি পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পড়ি দেয়া নিতান্তই কষ্টকর। এই অনুষ্ঠান বিশেষ করে বৌদ্ধ প্রধান রাষ্ট্রে উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র বান্দরবানে এই রীতিটি চালু রাখা হয়েছে। সাঙ্গু নদীর পাড়ে আয়োজিত বুদ্ধ মুর্তি ন অনুষ্ঠানে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উ পঞাঞা মহাথের (উচহ্লা ভান্তে) জাতির উদ্যোশ্যে ধর্ম দেশনা দেন এবং পুরোহিতদের পঞ্চশীল ও অষ্টশীল প্রদান করেন। এ সময় তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্ম অহিংসার ধর্ম। জাতি ভেদাভেদ করা মানে একে অপরকে হিংসা করা। ধর্মের অনুশাসন মেনে চললে হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। তাই পাহাড়ী আর বাঙ্গালী বলতে কিছু নেই। আমরা সকলেই মানুষ জাতি। পাহাড়ে বসবাসরত সকলকে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সম্প্রীতি বজায় রেখে নতুন বছরের এই সুন্দরকে আলিঙ্গন করতে হবে। পাহাড়ে সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য অশুভ শক্তির জন্ম হয়েছে। এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্ছার থাকতে হবে। তিনি সকল সম্প্রদায়কে মৈত্রীময় বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে আহবান জানান।

পুণ্যময় বুদ্ধ মুর্তি ¯স্নান অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি, বান্দরবান রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য্য, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ আবু জাফরসহ সহশ্রাধিক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী পুরুষ অংশ নেয়। এ ছাড়াও সন্ধ্যায় রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে হাজার বাতি প্রজ্জলন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মদেশনার পর বিভিন্ন বয়সের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী পুরুষ হাজার বাতি প্রজ্জলন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এ সময় পুরো এলাকাটি মোমের পরশময় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে।


(এএফবি/এসসি/এপ্রিল ১৫,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test