E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরে পৃথক সংঘর্ষে আহত ৪০, আটক ৫

২০১৫ জুলাই ২২ ১৯:০৭:২৯
শরীয়তপুরে পৃথক সংঘর্ষে আহত ৪০, আটক ৫

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর সদর ও জাজিরায় এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিবাদমান গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে।

আহতদের জাজিরা, শরীয়তপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ২২ রাউন্ড গুলি করে।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পালং থানার পুলিশ ৪ জনকে আটক করেছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে পৃথক পৃথকভাবে এ সংঘর্ষ হয়। জাজিরার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে।

শরীয়তপুরের ঘটনায় উভয় গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

থানা ও স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসেম হাওলাদার ও বিএনপি নেতা আইনজীবী হেলাল উদ্দিন আকন্দের সাথে দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে স্থানীয় গ্রামচিকন্দি বাজারে একাধিকবার উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে আবুল হাসেম হাওলাদারের ছেলে মিজান হাওলাদার ও রহিম বেপারী মোটরসাইকেল নিয়ে স্থানীয় গঙ্গানগর বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে গ্রামচিকন্দি লাল মিয়া আকনের বাড়ির নিকট পৌছলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা হেলাল আখন্দের সমর্থক ২০/৩০ জন লোক লাঠিসোটা নিয়ে এসে মোটরসাইকেল চালক রহিম বেপারীকে ও মিজান হাওলাদারকে ধরে নিয়ে বেদম মারপিট ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।

এ সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উভয় গ্রুপের সমর্থকরা লাঠিসোটা ঢাল, শরকি, রামদা, ছেনদা নিয়ে গ্রামচিকন্দি বাজারে এসে জড়ো হয়। এ সময় উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলতে থাকে।

খবর পেয়ে প্রথমে চিকন্দী ফাঁড়ির পরে পালং মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ২২ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে রেজাউল আকন, নাজমুল আকন ও আলমগীর হোসেন চৌকিদার গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। এ সময় পুলিশ উভয় গ্রুপের সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে হেলাল সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়লে কনষ্টেবল নাজমুল, নায়েব আলী ও লিটু শেখ নামে ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়।

পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে জামাল খাঁ, জাকির বেপারী, মাহফুজ আলম ও ফয়সাল আহম্মেদকে আটক করে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবুল হাসেম হাওলাদারের ছেলে মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, আমি পাশের গ্রাম থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে গ্রাম চিকন্দী উত্তর কান্দি আমিন বেপারীর বাড়ির কাছে পৌছলে হেলাল আকনের ভাতিজা মামুন, দেলোয়ার, আনোয়ার ও ইকবালসহ ২৫-৩০ জন লোক লাঠিসোঠা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার উপর চড়াও হয়। এ সময় আমাকে ও আমার মোটরসাইকেল চালককে পিটিয়ে ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এলাকার লোক এসে আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন আখন্দ বলেন, আমি এলাকায় কোন রাজনীতি করি না। আমার কোন গ্রুপ নেই। আমার ভাতিজা আওয়ামী লীগ নেতা উজ্জ্বল আখন্দের লোকদের সাথে হাশেম হাওলাদারের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে।

চিকন্দী ফাড়ির ইনচার্জ এস আই মো. মুহিদুল হক বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর গ্রাম চিকন্দী বাজার এলাকায় সাবেক চেয়ারম্যান হাশেম হাওলাদারের লোকদের সাথে বিএনপি নেতা হেলাল আখন্দের লোকজনের সাথে সংঘর্ষ বাধার খবর পেয়ে ছুটে যাই। সেখানে উভয় পক্ষকে নিবৃত করার চেষ্টা করলে হেলাল সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেলে ৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়।

পালং মডেল থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, দু’টি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে পুলিশ ২২ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোরা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। এলাকায় পুুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোন পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

এ দিকে জাজিরা উপজেলার সেনেরচর বালিয়াকান্দি গ্রামে ইউপি সদস্য বাদশা মাতবর ও জালাল জমাদ্দারেরর মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার কথা বলে বাদশা মাদবর ও রতন মাদবর এলাকার লোকজনের কাছ থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা তোলে। দীর্ঘদিনেও বিদ্যুৎ লাইন না দেয়ায় শাহ আলম জমাদ্দার টাকা ফেরত চাইলে কথা কাটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে উভয় গ্রুপের সমর্থক ২/৩'শ লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ৩ ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ সময় বাদশা মাতবরের সমর্থকরা প্রায় ৫০টি ককটেল বিস্ফোরন ঘটায়। এ সময় উভয় পক্ষের শাহ আলম জমাদ্দার, জালাল জমাদ্দার, শাহজাহান জমাদ্দার, আঃ লতিফ জমাদ্দার, আলী হোসেন জমাদ্দার, রফিক জমাদ্দার, আঃ জলিল মোল্লা, মোশারফ জমাদ্দার, এস্কান্দার মাতবর, সুমন শিকদার ও নুর হোসেন মাতবরসহ অন্তত ৩০ জন গুরুতর আহত হয়।

আহতদের প্রথমে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের অবস্থার অবনতি হলে ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

আহতদের মধ্যে শাহ আলম জমাদ্দারের অবস্থা আশংকাজনক। ককটেল বিস্ফোরণে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জালাল জমাদ্দার বাদী হয়ে ৪৬ জনকে আসামী করে জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। অপর পক্ষের বাদশা মাতবরের ভাই রতন মাতবর বাদী হয়ে ৪০ জনকে আসামী করে পাল্টা আরো একটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ মজিবর শেখ নামে একজনকে আটক করেছে।

এ ব্যাপারে বাদশা মাদবর বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এস্কান্দার মাতবরের উপর শাহ আলম জমদ্দার গংরা অতর্কিত হামলা করে। এ সময় উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় গ্রুপের সমর্থকরা আহত হয়।

জালাল জমাদ্দারের স্ত্রী শারমিন আকতার বলেন, বাদশা মাতবর ও তার দলবলের শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করে লুটপাট করে মালামাল নিয়ে যায়। এ সময় তারা আমার স্বামীসহ বেশ কয়েকজনকে ককটেল মেরে ও পিটিয়ে, কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে।

জাজিরা থানার ওসি মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, দু’টি বিবাদমান গ্রুপের সমর্থকরা মারামারি করেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় গ্রুপ মামলা করেছে। ১ জনকে আটক করা হয়েছে।

(কেএনআই/পিএস/জুলাই ২২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test