E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বড়লেখায় ধর্ষণের শিকার তরুণীর হাসপাতালে মৃত্যু, থানায় মামলা

২০১৬ জুলাই ২৬ ১৬:৩৬:৪০
বড়লেখায় ধর্ষণের শিকার তরুণীর হাসপাতালে মৃত্যু, থানায় মামলা

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :মেয়েটির বয়স (১৭)। রাতের নির্জন চা বাগানের টিলায় বর্বর পাশবিকতা চলছে তাঁর উপর। জন্মদাতা পিতা অন্ধকার রাতে টর্চ লাইটের আলোয় মেয়েটির সন্ধান করছেন। টিলা থেকে মেয়েটি বুঝতেছে বাবা তাঁর সন্ধান করছেন। কিন্তু সে আওয়াজ তুলে জানাতে পারেনি তাঁর অবস্থান। কারণ নরপশু তাঁর বুকের উপর বসে গলা চেপে রেখেছে । যাতে মেয়েটি তাঁর অবস্থান জানাতে না পারে। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর বাবা চলে যান বাড়িতে। রাতভর পাশবিকতার পর ভোরে নরপশু মেয়েটিকে ফেলে যায় বেরেঙ্গা চা বাগের ম্যানেজার বাংলোর উত্তর পাশে।

দিনের আলোয় রক্তাক্ত ও মূমূর্ষ অবস্থায় মেয়েটির সন্ধান পায় পরিবার। ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে জানাজানি হয়। অর্থ অভাবে ও লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েটির ঠিক মতো চিকিৎসা করাতে পারেনি পরিবার। ঘটনার ৭ দিন পর (২৪ জুলাই) রবিবার রাতে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেয়েটি মৃত্যু বরণ করে।

গতকাল (২৫ জুলাই) সোমবার লাশ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। অসহায় পিতা বড়লেখা থানায় ২ জন নরপশুর নামে মামলা করেন। মামলা নাং-২৬, তারিখ-২৫/০৭/২০১৬ইং। ন্যাক্কারজনক এই ঘটনাটির জন্ম হয়েছে মৌলভীবজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল এলাকায়।

মামলার আসামীরা হচ্ছে-উপজেলার কুমারশাইল গ্রামের জহির আলীর ছেলে নিজাম উদ্দিন (৩৫) ও সদর ইউনিয়নের বিছরাবাজার গ্রামের (বর্তমান ঠিকানা কুমারশাইল) গুজা মিয়ার ছেলে আমির উদ্দিন (২৫)।

স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল গ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা মেয়েটি (১৭) সাথে মামলার ২নং আসামী সদর ইউনিয়নের বিছরাবাজার গ্রামের আমির উদ্দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। (১৭ জুলাই) রবিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে আমির উদ্দিন মেয়েটিকে তার নিজ বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায়। যাওয়ার পর প্রেমিক আমির উদ্দিন স্থানীয় কুমারশাইল চা-বাগাস্থ হুঙ্গালাটিলায় নিয়ে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে একই গ্রামের নিজাম উদ্দিন ঘটনাস্থলে এসে আমিরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পরে নিজাম রাতভর মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। ভোররাতে মেয়টিকে সে বেরেঙ্গা চা বাগের ম্যানেজার বাংলোর উত্তর পাশে ফেলে চলে যায়।

এদিকে নিজাম আমিরকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর প্রেমিক আমির মেয়েটির বাবার মোবাইল ফোনে হুঙ্গালাটিলা থেকে তাঁর মেয়েকে উদ্ধার করার জন্য জানায়। অপরিচিত নম্বর থেকে কল পেয়ে বাবা মেয়েটির ঘরে খোঁজ করে দেখেন মেয়ে ঘরে নেই। পরে মেয়টির বাবা ও ভাই হুঙ্গালাটিলায় অনেক খোঁজাখুঁজি করে মেয়টিকে না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।

খবর পেয়ে পরদিন (১৮ জুলাই) সোমবার সকালে বেরেঙ্গা চা বাগের ম্যানেজার বাংলোর উত্তর পাশে রক্তাক্ত ও মূমূর্ষ অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে তার পরিবার। বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে মেয়টির প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। মেয়টিকে বিবাহ দিতে সমস্যা হবে এ চিন্তায় ও লোকলজ্জার ভয়ে বাবা ডাক্তারকে ধর্ষণের ঘটনাটি জানাননি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মেয়টিকে তারা বাড়ি নিয়ে যান।

বাড়িতে মেয়েটি পরিবারের কাছে সে রাতের ঘটনার বর্ণনা দেয়। (২৩ জুলাই) শনিবার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মেয়টির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়েটি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (২৪ জুলাই) রবিবার রাত ৯টার দিকে মারা যায়। ওই রাতেই মেয়টির লাশ বড়লেখা থানায় নিয়ে আসেন বাবা। পুলিশ লাশের সুরুতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

থানায় মেয়টির বাবা অশ্রুশিক্ত নয়নে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি গরিব মানুষ, টাকার অভাবে মেয়েকে চিকিৎসা করাইতে পারিনি। মান সম্মানের কথা চিন্তা করে স্থানীয় মেম্বার ছাড়া কাউকে প্রথমে ঘটনাটি জানাইনি। আমি এতো অসহায় একদিন কাজ বন্ধ করলে পরিবার দুদিন উপবাস থাকে। আমি আমার মেয়ে হত্যাকারীদের বিচার চাই। আমার মতো আর কোন বাবাকে যেনো মেয়ের মৃত্যু মুখ দেখতে না হয়।

বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাটি খুব মর্মান্তিক। ২জনকে আসামীকে করে মামলা হয়েছে। সুরুতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।




(এলএস/এস/জুলাই ২৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test