E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা লুটপাট

আশাশুনিতে প্রধান শিক্ষিকা শাকিলা খানমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

২০১৯ জানুয়ারি ২৪ ১৭:০২:০৯
আশাশুনিতে প্রধান শিক্ষিকা শাকিলা খানমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ৭ নং কামালকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাকিলা খানমের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সাড়ে তিন মাসেও কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। তবে তিনি স্বেচ্ছায় পার্শ্ববর্তী বৈকারঝুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করতে চাইলে তাকে বিরত করতে মঙ্গলবার ওই বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতিসহ  ২৭০  জন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন।

সরেজমিনে বুধবার সকালে আশাশুনির কামালকাটি সরকারি বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক শাকিলা খানম ছুটিতে থাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন জ্যেষ্ঠ সহকারি শিক্ষক আসমা আফরোজা।

বিদ্যালয়ে ২৪৫ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা উল্লেখ করে আসমা আফরোজা বলেন, পড়াশুনার পাশাাশি এখানকার শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার মানও ভালো। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রধান শিক্ষককে নিয়ে মাঝে মাঝে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। শ্রেণীকক্ষ সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন ভবনের জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ শেষ হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই ভবন নির্মাণ হয়ে যাবে। সে পর্যন্ত আমাদের একটু সমস্যা হবে।

শোভনালী ইউপি সদস্য ও বিদ্যালয়টি’র সাবেক সহসভাপতি উদয় কান্তি বাছাড় ও সদস্য কাটাখালি গ্রামের মফিজুল ইসলাম জানান, ২০১১ সালে শাকিলা খানম এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

যোগদানের কয়েকদিন পর থেকে তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিলের জন্য জোরপূর্বক মাথাপিছু ১০ টাকা করে আদায় করা, অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা, বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বাড়িতে নিয়ে ব্যবহার করা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস না নেওয়া, মা সমাবেশ না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে।

২০১৩ সাল থেকে২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বাবদ বরাদ্দকৃত প্রায় সাত লাখ টাকার বড় অংশই কাজ না করে লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। প্রতিকার চেয়ে গত বছরের সাত অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে চিঠি দিলেও অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। উপরন্তু প্রধান শিক্ষক শিক্ষা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে আত্মসাৎকৃত টাকা বিদ্যালয়ের ফাণ্ডে জমা না দিয়েই আগামি ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পার্শ্ববর্তা বৈকারঝুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের চেষ্টা করছেন। সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রকিব আহম্মেদ ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুন্নাহারকে ম্যানেজ করেই তিনি ভুয়া ভাউচার ও বিল তৈরি করে সবকিছু করে থাকেন। তাই তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না বলে প্রতিবাদকারিদের হুমকি দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন উদয় বাছাড়া ও মফিজুল ইলাম।

অভিভাবক ইউসুফ গাজী ও সাবিনা খাতুন বলেন, বিদ্যুৎ বিলের টাকা না দিতে পারায় তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে বের করে দেন প্রধান শিক্ষক। অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে বসুখালি স্কুলের অভিভাবকরা তাকে চেয়ারের পায়া দিয়ে মেরে বিতাড়িত করেন। স্কুলের বাচ্চাদের খেলনা কেনার টাকা, বাগান করার টাকা, প্রাচীর ও গ্রিল তৈরির টাকা আত্মসাত করেও কিভাবে ছাকিলা খানম বহাল তবিয়তে চাকুরি করেন, তার কেন শাস্তিমূলক বদলী হয়না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। গত ১০ জানুয়ায়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন শাকিলা খানমের বিরুদ্ধে তদন্তে এলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত ও শাস্তির দাবি জানান তারা।

বৈকারঝুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অশোক কুমার ঘোষ, অভিভাবক হরিদাস চক্রবর্তী, রমজান আলীসহ কয়েকজন জানান, দুর্নীতিবাজ শাকিলা খানম তাদের স্কুলে যোগদান করার চেষ্টা করছেন এমনটি জানতে পেরে তাকে প্রতিহত করার জন্য মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক ও সভাপতি মিলে ২৭০ জন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর গত মঙ্গলবার অভিযোগ করেছেন।

বুধবার বিকেলে শাকিলা খানমের সঙ্গে তার ০১৭৪৫-১৬৪৭৩২ নম্বর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

আশাশুনি উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রকিব আহম্মেদ বুধবার পশ্চিম কামালকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাজির হলে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শাকিলা খানমের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে ঠিকই। তবে কাগজপত্রে তা ঠিক ঠাক করা আছে। তাকে শাস্তিমূলক বদলীর ব্যাপারে মঙ্গলবার একটি চিঠি জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রহুল আমিন প্রধান শিক্ষিকা শাকিলা খাতুনকে আগামি ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্বেচ্ছায় বদলী না হলে তাকে শাস্তিমূলক বদলী করা হবে বলে তাকে সতর্ক করেছেন।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test