E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নওগাঁয় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার ছড়াছড়ি

২০১৪ অক্টোবর ১১ ১৬:১৭:১৭
নওগাঁয় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার ছড়াছড়ি

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা রীতিমত মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতাসহ ভোগ করছে সরকার প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা। কেউ কেউ নিজের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধিসহ সন্তানের চাকরিও পাইয়ে দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধার কোটায়।

বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমল থেকে এ পর্যন্ত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ দলীয়, কেউ জোটগতভাবে, কেউ প্রভাব খাটিয়ে আবার কেউ টাকা খাইয়ে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে তাদের নাম উঠিয়ে নিয়েছে। জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোন সুপারিশ ছাড়া বে-আইনী পন্থায় গেজেটভুক্ত এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা রীতিমত মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা উত্তোলন করছে। আর তাদের পেছনে সরকারের গচ্চা যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট ও সনদ বাতিল এবং সম্মানী ভাতা বন্ধের দাবী জানিয়েছেন সচেতন মুক্তিযোদ্ধারা।

বিগত ২০০৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পৃথক গেজেট প্রকাশ করা হয়। ওই গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়, তাদের অধিকাংশই ভুয়া এবং তাদের কোন বৈধ কাগজ-পত্র নেই বলেও দাবী করেন মুক্তিযোদ্ধারা। বর্তমানে এই তালিকা আরো লম্বা হয়েছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার একাধিক মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করেন, অনেকের বয়সের সঙ্গে মিল নেই, নিজে রাজাকার ছিল, বাবা রাজাকার ছিল, গোটা পরিবার স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল, তাদের অস্ত্র জমার সার্টিফিকেট নেই, কর্ণেল ওসমানীর সাটিফিকেট নেই, ভারতের কোন ক্যাম্পে ট্রেনিং নিয়েছে তার সনদপত্র নেই, এফএফ নং নেই, কোন এলাকায় যুদ্ধ করেছে তার সঠিক বর্ননা নেই, সর্বোপরী ভারতীয় তালিকায় এবং লাল মুক্তিবার্তায় এদের নাম নেই। তার পরেও এরা রীতিমত মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা উত্তোলন করছে। নওগাঁ সদর উপজেলার দেড় শতাধিক ভুয়া মক্তিযোদ্ধার মধ্যে দু’টি তালিকায় ১৩৪ জনের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। এদের গেজেট বাতিল ও ভাতা বন্ধের দাবীতে নওগাঁ সদর উপজেলা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ কমিটির নামে আবেদনপত্র ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রেরিত তালিকায় যাদের নাম পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলো, মুহঃ ওয়ালিউল ইসলাম (গেজেট নং-৩২৯২), মোঃ গোলাম রেজা সরওয়ার (গেজেট নং-৩১৭), ডাঃ এসএম বজলুল হোসেন (গেজেট নং-৩৩০৫), মোকছেদ আলী (গেজেট নং-৩৩০৬), একেএম গুলজার হোসেন (গেজেট নং- ৩৩০৭), সমীর কুমার মোহরার (গেজেট নং-৩৩১০), একেএম আমিনুল ইসলাম (গেজেট নং-৩৩১৩), গোলাম রহমান (গেজেট নং-৩৩১৭), এবিএম রফিকুল ইসলাম (গেজেট নং-৩৩১৯), আনিছুর রহমান মন্ডল (গেজেট নং-৩৩৩২), শেখ সেকেন্দার আলী (গেজেট নং-৩৩৩৬), মোঃ আলম হোসেন সোনার (গেজেট নং-৩৩৩৮), সিরাজুল হক (গেজেট নং-৩৩৩৯), আমিনুল ইসলাম (গেজেট নং-৩৩৮০), এফআরএম ফারুক (গেজেট নং-৩৩৪৪), আব্দুল আজিজ চৌধুরী (গেজেট নং-৬২২), ইয়াছিন আলী চৌধুরী (গেজেট নং-৬৫৬), মোজাফ্ফর হোসেন তালুকদার (গেজেট নং-৭৪০), এএফএম নূরুজ্জামান নান্টু (গেজেট নং-২৯৩৬), হাম্মাদুর রহমান (গেজেট নং-৫৯৩), আফাজ উদ্দিন (গেজেট নং-৩১৯৮), শঙ্কর রঞ্জন সাহা (গেজেট নং-৩০৮), আক্কাছ আলী আকন্দ (গেজেট নং-নাই), বিমল কৃষ্ণ রায় (গেজেট নং-৩২৮৯), আক্কাছ আলী সোনার (গেজেট নং-৩২৮৭), খলিলুর রহমান (গেজেট নং-৩৬৮), দেওয়ান খাজামুদ্দিন (গেজেট নং-১৭৩)।

এছাড়া তালিকা অনুযায়ী শহরের মাষ্টারপাড়া মহল্লার মৃত জসিম উদ্দিন মন্ডলের পুত্র আক্কাছ আলী (গেজেট নং-৩৯৮, মুক্তিবার্তা নং ০৩০৫০১০৩৪২) ৭১’ এ একজন রাজাকার ছিলেন। বাঙ্গাবাড়িয়া মহল্লার কাজি রেজাউল ইসলাম (গেজেট নং-৫২৩, মুক্তিবার্তা নং-০৩০৫০১০২৮৫) তার পিতা রাজাকার ছিলেন। বক্তারপুর গ্রামের মৃত খোদা বক্স সরদারের পুত্র শহীদুল ইসলাম (গেজেট নং-নেই, মুক্তিবার্তা নং-০৩০৫০১০৭২৭) তার ৭১’ সালে বয়স ছিল দেড় বছর। মুরাদপুর গ্রামের মৃত শুকুর আলীর পুত্র মোঃ আব্দুল সুজন (গেজেট নং-৮৯৭, মুক্তিবার্তা নং-০৩০৫০১০০৬৬) এই নামে কেউ নেই। চুনিয়াগাড়ি গ্রামের মৃত মনির উদ্দিন মল্লিকের পুত্র মোসলেম মল্লিক (গেজেট নং-৫১৬০, ০৩০৫০১০৫১৪) নিজেই রাজাকার ছিল।

ইলশাবাড়ি গ্রামের মৃত হাজির আলী মন্ডলের পুত্র মোঃ নূরুল ইসলাম (গেজেট নং-৩১৯) এ নামে সেখানে কেউ নেই। সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোঃ গোলাম সামদানী জানান, সদর উপজেলার দেড় শতাধিক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীভাতা উত্তোলন করছে। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এদের সনদ বাতির করা জরুরী।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নওগাঁ জেলা ইউনিট কমান্ডার মোঃ হারুন অল রশিদ বলেন, বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে এবং ২০১২-১৩ সালে গেজেটভুক্ত হওয়া এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম গেজেট থেকে বাদ দেয়ার জন্য আমরা বহুবার চেষ্টা করে সফল হতে পারিনি। ফলে তারা বহাল তবিয়তে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সকল সরকারী সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে চলেছে। তবে অতিসম্প্রতি সরকার একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভুয়াদের ছাঁটাই করতে সরকার বদ্ধপরিকর।

(বিএম/এটিআর/অক্টোবর ১১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test