E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সালথার বড়দিয়া বিশ্বাস বাড়ীর গণকবর সংরক্ষণের দাবি

২০২৩ মার্চ ২০ ১৮:২৫:০৫
সালথার বড়দিয়া বিশ্বাস বাড়ীর গণকবর সংরক্ষণের দাবি

আবু নাসের হুসাইন, সালথা : ১৯৭১ সালে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বড়দিয়া বিশ্বাস বাড়ীর ৬জনকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানী পাকহানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার ও বিহারীরা। ৬ জনের মরদেহ বিশ্বাস বাড়ীর পাশেই নদীর পাড়ে গণকবর দেওয়া হয়। সেই গণকবর সংরক্ষনের দাবী জানিয়েছেন বিশ্বাস বাড়ীর লোকজন ও স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এই পরিবারের একজন সে-সময় পালিয়ে বেঁচে থাকা “ভানু কুমার বিশ্বাস” গণহত্যা সংগঠিত হবার পর তিনি ভারতে গিয়ে ট্রেনিংপ্রাপ্ত হয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। কিন্ত তিনিও আজ বেঁচে নেই। তিনি ১৯৯৫ ইং সালে ভারতে গিয়ে মারা যান। তার স্ত্রী কল্পনা রানী বিশ্বাস দুই পুত্র ও দুই কন্যা নিয়ে ওই বিশ্বাস বাড়ীতেই বসবাস করে আসছে। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা ভানু কুমার বিশ্বাসের বড় ছেলে স্কুল শিক্ষক প্রণব কুমার বিশ্বাস বলেন, আমার ঠাকুমা ও বাবার কাছ থেকে জেনেছি, ১৯৭১ সালের ২১ মে রোজ শুক্রবার ভোর রাতে রাজাকার ও বিহারীরা নদী পথে লঞ্চে এসে বাড়ীর সদর দরজায় আঘাত করে, তখন দরজা খুলতেই তারা হামলা চালায়। এসময় আমার ঠাকুর দাদা, বড় কাকাসহ ৭জনকে ধরে নিয়ে রাস্তার পাশে এক সঙ্গে ব্রাশ ফায়ার করে। ভাগ্যক্রমে গুলি লাগার পর ঠান্ডু নামে একজন প্রানে বেঁচে যায়। বাকি ৬জন বীরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস, গোপাল কুমার বিশ্বাস, বারন কুমার বিশ্বাস, কানু কুমার গুহ, বাবলু কুমার গুহ ও বিশ্বনাথ সাহা ঘটনাস্থলে মারা যায়। তাদেরকে রাস্তার পাশেই একই গর্তে সমাহিত করা হয়।

এদিকে ঘটনার সময় আমার বাবা ওদের আসার উপস্থিত টের পেয়ে নদী পাড়ি দিয়ে অন্যগ্রামে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং দিয়ে এসে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে আমার বাবা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার বাবা বাড়ী ফিরে আসেন। পরে তিনি ১৯৯৫ ইং সালে ভারতে বেড়াতে গিয়ে মারা যান।

তিনি আরো বলেন, সেদিন আমার পরিবার ও পরিজন যাদেরকে হারিয়েছি, তাদেরকে তো আর ফিরে পাবো না। তবে তাদের গণকবর সংরক্ষন ও স্মৃতিসৌধ করার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি।

বড়দিয়া বিশ্বাস বাড়ীর গণকবর সংরক্ষনের দাবী জানিয়ে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার আলীমুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতুব্বর, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরুর আগ মুহুর্তে পাকহানার বাহিনীর দোসর রজাকার ও বিহারীরা নদী পথে এসে বড়দিয়ার ভানু বিশ্বাসের পরিবার ও পরিজনের ৬ জনকে ব্রাশ ফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। সেদিন ভানু বিশ্বাস পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়। পরে ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে এসে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলো ভানু বিশ্বাস।

রাজাকার ও বিহারীদের বুলেটে যাদের জীবন থেমে গেছে, তাদের গণকবর সংরক্ষনের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, গট্টি ইউনিয়নের বড়দিয়া বিশ্বাস বাড়িতে একটি গণকবর রয়েছে। যেখানে ৬ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তারা ওখানে সমাহিত অবস্থায় আছেন। আমরা উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে এই গণকবরটিকে আমরা সংরক্ষন করবো সরকারীভাবে। যথাযথ মর্যাদায় যেন ভবিষ্যতে এটা সংরক্ষিত হয়, সেই উদ্যোগ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে।

(এন/এসপি/মার্চ ২০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test