E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লাশ হয়ে মায়ের কোলে ফিরল সুখি

২০১৫ মে ২০ ১৮:৪৪:৫৫
লাশ হয়ে মায়ের কোলে ফিরল সুখি

বাগেরহাট প্রতিনিধি : ‘টাকা নিয়ে না গেলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে মা। আমাকে শেষ দেখা দেখে রাখ। কোন অন্যায় করলে মাফ করে দিও। আর কোন দিন হয়তো তোমরা আমকে দেখতে পারবে না।’

গত এক মাস আগে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে এ কথাগুলো বলেছিল বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা গ্রামের মোস্তফা গাজীর মেয়ে ফাতেমা আক্তার সুখি (২৫)। তার এ কথা সত্য প্রমানিত হয়েছে। ২১ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বুধবার সকালে লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে সুখিকে।

বাবা-মা আদর করে তার নাম রেখেছিল ‘সুখি’। কিন্তু সুখ যে তার কাছে ধরা দেয়নি। ছোট বেলায় বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে বাড়ি থেকে সুখির মাকে তাড়িয়ে দিলে সে অন্যত্র বিয়ে করে। ফাতেমা আক্তার সুখি মামার বাড়িতে বড় হয়। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শিখে স্বাবলম্বি হবে। কিন্তু অভাবের কাছে হার মেনে মাত্র নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় তার। স্বামী বাহারকে নিয়ে একটি সুখের সংসার বানাতে চেয়েছিল সুখি। কিন্তুতা আর হয়ে ওঠেনি।

বুধবার সকালে লাশ নিয়ে ফেরার সময় বাগেরহাট দড়াটানা ব্রীজের নিচে বসে নিহত ফাতেমা আক্তার সুখির মামা এমদাদ হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, বাপের আদর-স্নেহ বঞ্চিত সুখিকে তারা মানুষ করেছে। অভাবের ভিতরও তারা অনেক কষ্ট করে সুখির লেখা পড়া চালাচ্ছিলেন। ২০০৯ সালে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে সুখিকে গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর উপজেলার আ. রাজ্জাক শেখের ছেলে বাহার উদ্দিন সেখ দেখে পছন্দ করে। সব কিছু যেনে শুনে পারিবারিক ভাবে বাহারের সাথে সুখির বিয়ে হয়। এ সংসারে নুশরাত নামে সাতে ৩ বছরের একটি কন্য সন্তান রয়েছে। বাহার উদ্দিন বিয়ের ২/৩ মাস পর থেকে সুখিকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। চালাতে থাকে শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতন। সুখির সুখের কথা চিন্তা করে তার ৮ মামা মিলে কয়েক দফায় তারা দেড় লক্ষ টাকা যৌতুক দেয় বাহারের হাতে। মাসখানেক আগে এক লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে দেয়ার জন্য সুখিকে চাপ দিতে থাকে। শুরু করে শারিরিক নির্যাতন। সুখির জানা ছিল মামাদের অভাব-অনাটনের কথা। সে অস্বীকৃতি জানানোর পরও নির্যাতন সইতে না পেরে মামার বাড়িতে আসে। সুখি সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে টাকা ছাড়াই সে ফিরে যায় স্বামীর বাড়ি মকসুদপুরে।

নিহতের মামা ও অন্য আত্মীয়রা মকসুদপুর গিয়ে স্থানীয়দের কাছে শুনেছেন, এপ্রিল মাসের ২৭ বা ২৮ তারিখ রাতে সুখিকে তার স্বামীর পরিবারের ৪/৫ সদস্য মিলে নির্যাতন করে চেপে ধরে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে ঘরের বাইরে বের করে দেয়। পরদিন অসুস্থ সুখিকে স্থানীয় একটি ক্লিনিতে ভর্তি করে। ৪ দিন পর গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ৩ দিন পর ৫ মে তাকে ঢাকার গ্রীনলাইফ হাসপাতালে ভতি করে। সুখির মামাদের এবিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। গত ১৫ মে সুখির মুমুর্ষ অবস্থায় তার মামাদের খবর দেয়া হয়। এভাবে ২১ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মঙ্গলবার বিকালে সে মারা যায়। সুখির মৃত্যুর সাথে সাথে হাসপাতাল থেকে তার স্বামীসহ সকলে পালিয়ে যায়।

সুখির মামা অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার রাতে তারা মকসুদপুর থানায় অভিযোগ করতে যান। কিন্তু ডিউটি অফিসার তাদের সাথে খারাপ আচারন করে মামলা নেয়া হবেনা জানিয়ে তাদের নিজেদের থানায় (বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ) মামলা দিতে পরামর্শ দেন।

এবিসয়ে কথা বলার জন্য নিহতের স্বামী বাহার উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে বুধবার সকাল থেকেই তার সেলফোন নাম্বার বন্ধ ছিল। দুপুরের দিকে একবার নাম্বারটি খোলা পেয়ে কল করা হলে অপর প্রান্ত থেকে জানতে চাওয়া হয় কে ? পরে সাংবাদিক পরিচয় শুনে কলটি কেটে দিয়ে মোবাইলটি বন্দ করে রাখা হয়।

এবিষয়ে মকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবিজুর রহমান বলেন, আমরা কেন মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানাবো ? অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি দাবী করেন।

(একে/এএস/মে ২০, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test