E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পুত্রবধূকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে বেত্রাঘাত ও জরিমানা!

২০১৫ মে ২৯ ১৭:০৬:৫৩
পুত্রবধূকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে বেত্রাঘাত ও জরিমানা!

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় পুত্রবধুকে লাঞ্ছিত করাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে সালিশ বৈঠকে আতাবর রহমান (৫০) ও  জরিনা বিবি (৪২) নামে এক দম্পতিকে ৫০ বেত্রাঘাত করেছে স্থানীয় মাতব্বররা। শুধু বেত্রাঘাত করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, গ্রাম্য মাতব্বররা ওই দম্পতিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছে।

বেত্রাঘাতে ওই দম্পতি গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আতাবর রহমানকে শুক্রবার সকালে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলার প্রসাদপুর ইউনিয়নের মঞ্জিলতলা বাজারের পাশে এনায়েতপুর গ্রামে কাসেম উদ্দিনের বাড়িতে ডাকা সালিশ বৈঠকে এই ঘটনা ঘটানো হয়। বৈঠকে স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়েজ উদ্দিন সরদার, নারী সদস্য আলেয়া বিবিও উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, গত ২৪ মে সকাল ৯টার দিকে আতাবর রহমানের পুত্র জামাল হোসেন ও পুত্রবধূ সুরাইয়া বিবির মধ্যে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে তা প্রচন্ড আকার ধারণ করলে আতাবর রহমান উভয়কে থামানোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। পরে তিনি পুত্রবধূকে নিবৃত্ত করতে চড়-থাপ্পড় দেন।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মাতবররা বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে কাসেম মাষ্টারের বাড়ির খলিয়ানে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে।

বৈঠকে মাতবর আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে স্থানীয় মাতবর সুজন আলী, আব্দুল কাইয়ুম, আজিজার রহমান, সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী. মোস্তাক হোসেন, ওসমান গণি, আজাহার আলী বাগসহ প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এসময় সালিশের সভাপতি আলতাফ হোসেনের হুকুমে ওই দম্পতিকে সেখানে ধরে আনা হয়। পরে রাত ১০টার দিকে কমিশন গঠন করে রায় ঘোষণা করে সভাপতি আলতাফ হোসেন। রায়ে ওই দম্পতিকে ৫০টি বেত্রাঘাতসহ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায় কার্যকর করেন গ্রাম পুলিশ মমতাজ হোসেন। তার বেতের আঘাতে আতাবর রহমানের বাম হাতের কব্জি ফেটে গিয়ে রক্তপাত হয়। আহত হন আতাবরের স্ত্রী জরিনা বিবিও।

আহত আতাবর রহমান অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতেই মাতবররা চৌকিদার দিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীকে পিটিয়ে আহত করেছে। চেয়ারম্যানের হাত-পায়ে ধরেও নির্যাতনের হাত থেকে তারা রক্ষা পান নি। তাদের বাঁচানোর কথা বলে সালিশের মাতবর ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি । বর্তমানে মাতবরদের হুমকির মুখে ওই পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন বলে তিনি জানান। মান্দা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাশিক আলভী জানান, শুক্রবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের সময় আতাবর রহমানকে ভর্তি করা হয়েছে। তার বাম হাতের কব্জির নিচের হাড় ফেটে গেছে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

সালিশ বৈঠকের সভাপতি আলতাফ হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন বলেন, চেয়ারম্যানের পরামর্শে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজ উদ্দিন সরদার জরিমানাসহ বেত্রাঘাত করার কোন ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে বলেন, পুত্রবধুর চিকিৎসার জন্য ২ হাজার ও চৌকিদারি খরচের জন্য ২ হাজার এই মোট ৪ হাজার টাকা ওই দম্পত্তির নিকট থেকে নেয়া হয়েছে। যেহেতু পুত্রবধুকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, এই কারণে সালিশে ২/৪টা চড়-থাপ্পর মেরে তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে দন্ডকার্যকরি দফাদার মমতাজ হোসেন বলেন, আমরা ৪ জন মিলে চৌকিদারি খরচের মাত্র ১ হাজার টাকা পেয়েছি। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, আমি হুকুমের গোলাম, চেয়ারম্যান যে ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন আমি সেইভাবে কাজ করেছি।

এব্যাপারে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, এধরনের কোন অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি শুনেছি। এটি তাদের সম্পূর্ণ পারিবারিক বিষয়। তার পরেও বিষয়টি খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

(বিএম/এএস/মে ২৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test