E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় মটরযানের রাজস্ব জমা দিতে গ্রাহকদের ভোগান্তি

২০১৫ আগস্ট ০৪ ২২:০৮:২৪
সাতক্ষীরায় মটরযানের রাজস্ব জমা দিতে গ্রাহকদের ভোগান্তি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় মটরযানের রুট পারমিট, রেজিষ্ট্রেশন ফি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস পরীক্ষা, ট্যাক্স ও পরিদর্শণ ফি বাবদ রাজস্ব জমা দিতে এসে মালিকদের প্রতিদিন বিড়ম্বনা আর ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। লাইনে দাড়িয়ে কখনো কখনো মিলছে পুলিশের গলা ধাক্কা ও লাঠির আঘাত। এ অবস্থা চলছে গত দেড়মাস ধরে।  টাকা জমা দেয়ার জন্য সরকার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংক  নির্ধারন করে দেয়ার কারণে  মটরযান  মালিকরা ব্যাংকে টাকা জমা দিতে এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। ভোর থেকে ব্যাংকের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও দিন শেষে  টাকা জমা দিতে না পেরে প্রতিদিন শত শত মালিকদের ফিরে যেতে হচ্ছে।

সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকার গত পয়লা জুলাই থেকে কাগজপত্র বিহীন মটরযান চালানোর উপর নিষেধাঙ্গা আরোপ করে। ফলে ট্রাফিক পুলিশ, পুলিশ ও ভ্রাম্যমান আদালত জেলাজুড়ে কাগজপত্র বিহীন মটরযান ধরতে ষাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। প্রতিদিন ব্যাপক অংকের টাকা জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি মামলাও হয় বেশ কিছু। এরপর থেকে সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে কাগজপত্র বিহীন, আংশিক কাগজপত্র থাকা বা ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র থাকা মটরযান মালিকরা ফি জমা দেয়ার জন্য বিআরটিএ অফিসের মাধ্যমে সঙ্গীতা মোড়ের ব্র্যাক ব্যাংক শাখায় ভীড় করতে থাকে।

মঙ্গলাবার সকাল ১১টার দিকে ব্রাক ব্যাংকের সামনে লাইনে মটর সাইকেলের রেজিষ্ট্রেশন ফি জমা দিতে আসা আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের শহর আলী, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য টাকা জমা দিতে আসা শ্যামনগরের গাবুরা গ্রামের জোহর আলী, কালীগঞ্জের বিষ্ণুপুরের বাপ্পি কর্মকারসহ কয়েকজন জানান, প্রতিদিন ৬০টির বেশি মটরযানের কাগজপত্র বাবদ ফি জমা নেওয়া হচ্ছে না মর্মে তারা জেনেছেন। সে অনুযায়ী সোমবার ভোর চারটার দিকে এসে তারা অন্যদের মত লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে লাইনে লোকসংখ্যা তিন শতাধিক এর উপরে চলে যায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করে বৃষ্টি আসায় লাইন ভেঙে যায়। একপর্যায়ে তারা টাকা জমা দিতে না পেরে বাড়ি ফিরে যান। বাধ্য হয়ে পুলিশি হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে মঙ্গলবার আবারো লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এমতাবস্থায় আব্দুর রশিদ, সালামসহ কয়েকজন দালাল জোর করে লাইনে ঢুকে পড়লে তারা প্রতিবাদ করেন। এতে বিরোধ বাঁধে। শুরু হয় হাতাহাতি। খবর পেয়ে ব্যাংক ব্যবস্থাপকের আবেদনে সাড়া দিয়ে পুলিশ এসে লাইনে থাকা মানুষের উপর লাঠি চার্জ করে। এতে প্রকৃত দালালরা কেউ মার না খেলেও তারা আহত হয়েছেন। তাদেরকে লাঠিপেটা ছাড়া পুলিশের গলা ধাক্কা খেতেও হয়েছে। পুলিশ পাঁচজন দালালকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদেরকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। চার থেকে পাঁচ দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে টাকা জমা দিতে পারেননি বলে তারা অভিযোগ করেন।

লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন মটরযান মালিকের অভিযোগ, সাতক্ষীরা শহরের নারিকেলতলায় বাজাজ সেলস সেন্টার, কামাননগরে ভেনাস অটো, কাশেম অটো, বেতনা ট্রেডার্স, করিম মটরস, পুলিশ লাইনের সামনে হুণ্ডা উইং, বাস টার্মিনালের সামনে চৈতী মটরস, নিউ মার্কেটের সামনে সাইকেল মার্টসহ বেশ কয়েকটি নতুন মটর সাইকেলের শো রুম রয়েছে। দেড় মাস আগে সরকারিভাবে রেজিষ্ট্রেশনবিহীন মটর সাইকেল বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়ায় তারা পড়েছেন বিপাকে। ফলে তারা লাইনে না দাঁড়িয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা জমা দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আর তারা ব্যাংকের সামনে রোদ বৃষ্টিতে দিনভর লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টাকা জমা দিতে না পেরে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া ব্যাংক গেটের মুখে থাকা এসির গরম বাতাসে তাদের পুড়তে হচ্ছে। তারা ব্রাক ব্যাংক ছাড়াও টাকা জমার দায়িত্ব অন্য কোন ব্যাংকের উপর দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাতে প্রতিদিন সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ার পাশাপাশি জনদুর্ভোগ কমবে।

ব্র্যাক ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক জহির আহম্মেদ বলেন, মটরযানের কাগজপত্র সংক্রান্ত ফি টাকা জমা নেয়ার জন্য একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৮০ জনের টাকা জমা নিচ্ছেন। বিআরটিএ’ এর দেওয়া টাকা জমা নেওয়ার জন্য একটি কম্পিউটর যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের দেওয়া সিটি সেল আল্ট্রা জুম নেটওয়ার্ক মাঝে মাথে এত স্লো যায় যে তাতে কাজের গতি হারিয়ে যায়। বর্তমানে ভিড় কমাতে আরো একটি কম্পিউটর ও গ্রামীন ফোনের মর্ডেম দাবি করেন তিনি। ব্যাংকের নিরাপত্তার সাথে টাকা জমাকারিদের ভিতরে না ঢুকিয়ে লাইন থেকে এক এক বারে ১০জনকে ঢোকানো হয়। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোন প্রকার অনিয়ম ও দূর্ণীতির কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, কারা দালাল এটা তার জানার বিষয় নয়। ব্যাংকের নিরাপত্তার স্বার্থে গণ্ডগোলের বিষয়টি তিনি পুলিশকে অবহিত করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে পুলিশ তাদের কাজ করে।

এ ব্যাপারে বিআরটিএ সাতক্ষীরা শাখার সহকারী পরিচালক তানভির আহম্মেদ জানান, তিনি ঢাকায় প্রশিক্ষণে রয়েছেন। তবে মটরযান পরিদর্শক আবু জামান জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মটরযান সম্পর্কিত যাবতীয় কাগজপত্রের টাকা জমা দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ করতে সিএনএস (কম্পিউটর নেটওয়ার্ক সফটওয়ার) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। সেক্ষেত্রে তারা প্রথমে সাউথ ইষ্টার্ণ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ করে প্রায় দু’ বছর আগে ব্রাক ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। সেক্ষেত্রে তারাই ব্রাক ব্যাংককে কম্পিউটর সরবরাহ করেছে। এ ব্যাপারে তাদের কোন এক্তিয়ার নেই। তবে গ্রাহকদের দুর্ভোগের বিষয়টি তারা বিআরটিএ’ এর প্রধান কার্যালয়ের পরিচালককে (প্রকৌশলী) একাধিকবার অবহিত করেছেন।

সিএনএস (কম্পিউটর নেটওয়ার্ক সফটওয়ার) এর ডাটা প্রগ্রাম এর ব্যবস্থাপক ইলিয়াস হোসেন জানান, সম্প্রতি পুলিশের অভিযান শুরু হওয়ায় কাগজপত্র তৈরিতে মটরযান চালকদের ভিড় বেড়েছে বিঅরটিএ ও ব্রাক ব্যাংকে। সেক্ষেত্রে একটি কম্পিউটরে কাজ করা অসম্ভব বলে তিনি মনে করেন। তবে বিষয়টি তিনি তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেন, ব্রাক ব্যাংক সাতক্ষীরা কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি তাদের প্রধান কার্যালয়কে অবহিত করা।

(আরকে/পি/অাগস্ট ০৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test