E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নোয়াখালীতে স্কুলছাত্রী পেটানো সেই ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে

২০১৬ আগস্ট ৩১ ১৪:৫৮:০৪
নোয়াখালীতে স্কুলছাত্রী পেটানো সেই ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে

নোয়াখালী প্রতিনিধি : মামলা দায়েরের পর থেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন স্কুলছাত্রী নির্যাতনকারী নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরবাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন। গতকাল আদালতের নির্দেশে সুবর্ণচরের চরজব্বর থানায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু হওয়ার পর রাতেই পুলিশ তাকে ধরতে অভিযান চালায়। তবে তার আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান আলোচিত এই চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার চরজব্বর থানার ওসি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, "আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল রাতে নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রীর বাবা আদালতে মামলা দায়েরের পর তা নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে। এরপর রাতে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।" তবে তাকে পাওয়া যায়নি বলে জানান ওসি।

এলাকাবাসী জানায়, পারিবারিক ঝগড়ার জের ধরে সুবর্ণচর উপজেলার ২ নম্বর চরবাটা ইউনিয়নের পূর্ব চারবাটা গ্রামের মো. হানিফ ও তার পরিবারের সদস্যদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সালিসি বৈঠকে হাজির হতে নোটিশ দেন চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন। নোটিশ অনুযায়ী গত ২২ আগস্ট সন্ধ্যার পর হানিফ তাঁর স্ত্রী ও শ্যালিকাকে নিয়ে ইউপি কার্যালয়ে যান। এ সময় চেয়ারম্যান কোনো বক্তব্য না শুনেই তাঁদেরকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন।

এক পর্যায়ে জানতে চান তাঁদের মেয়ে রাবেয়া আক্তার কোথায়। এ সময় মেয়ে বাড়িতে পড়ালেখা করছে জানালে চেয়ারম্যান চৌকিদার পাঠিয়ে রাত ৯টার দিকে চরবাটা বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী রাবেয়া আক্তারকে (১৫) ধরে পরিষদ কার্যালয়ে এনে প্রকাশ্যে বেধড়ক পিটুনি দেন।

মো. হানিফ অভিযোগ করেন, পেটানোর সময় তাঁর স্ত্রী চেয়ারম্যানের পা ধরে মেয়েকে মাফ করে দেওয়ার জন্য আকুতি জানান। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত না করে পেটানো অব্যাহত রাখেন। একপর্যায়ে মেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও তাকে হাসপাতালে নিতে দেওয়া হয়নি। পরে পরিষদ থেকে চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার পর তিনি মেয়েকে সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২৪ আগস্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু এখনও সে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় তাকে স্কুলে পাঠানো হয়নি। বাড়িতে তার চিকিৎসা চলছে বলে জানান তিনি।

মো. হানিফ আরো অভিযোগ করেন, মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে চেয়ারম্যানের লোকজন তাঁকে নানা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। সর্বশেষ তিন দিন আগে চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়ে প্রতিবেশী ইব্রাহিম ফোন করে তাঁর ছেলেকে বাড়াবাড়ি করলে বসতঘরেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন। তিনি বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অবহিত করেন। সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী বিষয়টি জেনে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

এদিকে, স্কুলছাত্রী ইউপি চেয়ারম্যানের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হওয়ার প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে সুবর্ণচরের চরবাটা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা এরই মধ্যে সালিসের নামে স্কুলছাত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন।

(এসএস/এএস/আগস্ট ৩১, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test