E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রূপপুর প্রকল্পের ৭ কিঃমিঃ মধ্যে 

বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও মানছে না বালু খেকোরা

২০১৮ জানুয়ারি ১৮ ২২:৫০:০২
বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও মানছে না বালু খেকোরা

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেপিআই বা অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রকল্পের আশেপাশের ৭ কিলোমিটারের মধ্যে পদ্মা নদী থেকে বালু মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ বিষয়ে গত ২৬ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল জলিল এক পত্রে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু সরকারি নিষেধোজ্ঞা জারির পরও নির্দেশ মানছেন না প্রভাবশালী বালুখেকোরা। অবৈধভাবে পারমাণবিক প্রকল্প সংলগ্ন এলাকা ও হাডিজ্ঞ ব্রীজের পাশে কয়েকটি  স্থানে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে তারা। 

জানা যায়, ঈশ্বরদীতে শাওন এন্টারপ্রাইজ, বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ ও আনোয়ারুল হক মাসুম এন্টারপ্রাইজ নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে বৈধ বালু উত্তোলন ইজারা রয়েছে। কিন্তু এই তিন প্রতিষ্ঠানের কোনটিই এখানে বালু উত্তোলন করতে পারে না। প্রভাবশালী কতিপয় নেতা জোরপূর্বক অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে।

সরজমিনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার পাশপাশে পদ্মা নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সরকারি নিদের্শনা অমান্য করে এখানে দেদারসে বালু-মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলন করে রীতিমত পাহাড়সম বালুর মজুদ গড়ে তুলে বালু বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। বালু উত্তোলনকারী ও ব্যবসার সাথে জড়িত সবাই ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা জড়িত বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা ও দলীয় নেতা-কর্মী সূত্র জনিয়েছে।

সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর এই বিশাল এলাকা লীজ না নিয়ে লীজ গ্রহীতা কৃষকদের নিকট থেকে ভাড়া নিয়ে সেখানে বালুর ব্যবসা করছেন বালু ব্যবসায়ী ‘নির্দিষ্ট’ কয়েকজন নেতা। তবে রেল সূত্র এবং স্থানীয়রা বলেছেন কোন লীজ নেই, প্রভাবশালীরা জবর দখল করেই বালুর ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

স্থানীয়রা জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতুর খুব কাছে থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ব্রীজ দুটি হুমকির মধ্যে রয়েছে। বালুর স্তুপ বড় হতে হতে এখন এমন পর্যায়ে, যে বালুর বিশাল বিশাল স্তুপের আড়ালে ঢাকা পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু। তবে বালু উত্তোলনকারীরা বলেছেন হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিকট বালু স্তুপ করা হলেও এখান থেকে বালু উঠানো হচ্ছেনা। এই বালু কুষ্টিয়া, আলাইপুর, পাবনাসহ বিভিন্ন ঘাট হতে নৌকাযোগে এনে নৌকার সাথে ড্রেজিং মেশিন লাগিয়ে বালুর মজুদ করার হচ্ছে। পরে এখান থেকে বিক্রি করা হচ্ছে বালু।

পাকশীস্থ পদ্মার এই বালুমহালে থাকা একাধিক বালু ব্যবসায়ীরা জানান, তারা পদ্মা নদীর এসব জমি ভাড়া নিয়ে বালু স্তুপ করে বিক্রি করছেন। বালু ব্যাবসায়ীরা আরো জানান, প্রতিদিন ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীর ৪টি ঘাটে গড়ে প্রায় ১ হাজার ট্রাক বালু বিক্রি হয়। টাকার হিসেবে এসব ঘাট থেকে প্রতিদিন ১০ লাখ টাকার বালু বিক্রি হয়।
এখানে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে পারমাণবিক প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ করছে দি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, এলকে এন্টারপ্রাইজ, খোকন ট্রেডিং ও শফিক ট্রেডার্স।

বৈধ বালুর ইজারাদার শাওন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু সাঈদ খান জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পাবনা জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছি। ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে হাইকোর্টে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের আবেদন জানিয়ে একটি রিট দায়ের করি।

এই রিটের প্রেক্ষিতে পাবনা জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালত নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি নিদিষ্ট সময়েও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করি। ডিসি সাহেব আদালতে উপস্থিত হয়ে আবারো সময় প্রার্থনা করেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত এবিষয়ে কোন সূরাহা হয়নি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় সেতু প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নির্দিষ্ট দুরত্বের কাছাকাছি পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে ঐতিহাসিক এই ব্রিজ হুমকির মুখে পড়বে। আর ব্রিজের এত কাছাকাছি এলাকায় বালুমহাল ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

(এসকেকে/এসপি/জানুয়ারি ১৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test