E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লাশ আনার প্রক্রিয়া চলছে

চুনারুঘাটের ৩ যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে ভারতীয় গ্রামবাসী

২০১৪ অক্টোবর ২৯ ২০:০৮:৫১
চুনারুঘাটের ৩ যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে ভারতীয় গ্রামবাসী

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা সীমান্তের অপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও খোয়াই জেলার বাচাইবাড়ী নামক এলাকায় ৩ বাংলাদেশীকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। মঙ্গলবার বিকেলে বাল্লা সীমান্তের অপারে ভারতীয় অংশে ব্যাটলিয়ান পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের পর সন্ধায় লাশ ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে চুনারুঘাট উপজেলার আলীনগর গ্রামে স্বজন হারানোদের হাহাজারীতে ভারী হয়ে উঠেছে পূর্ব মুছিকান্দি পাহাড়ী এলাকা। নিহত তিনজনই ভূমিহীন হিসাবে পাহাড়েরর এই সরকারী জায়গায় বসবাস করত। নিহতরা হলেন আজগর আলীর ছেলে করম আলী (৪০), সমির হোসেনের ছেলে সুজন মিয়া (২২) এবং সনু মিয়ার ছেলে আক্কল মিয়া (১৯)। করম আলীর বিরুদ্ধে চুনারুঘাট থানায় একাধিক মামলা থাকলেও সুজন ও আক্কল মিয়ার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই।

সরজমিনে আলীনগর গ্রামের পূর্ব মুছিকান্দি পাহাড়ে গেলে শোনা যায় কান্নার রোল। এর মধ্যে সুজন মাত্র ৮/১০দিন আগে বিয়ে করে। তার পিতা থাকেন বিদেশে। মা আলেয়া বেগম ও স্ত্রীর কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। আক্কল মিয়াও বিয়ে করেছে খুব বেশি দিন হয়নি। বছর দেড়েক পুর্বে সে সুফিয়াকে বিয়ে করে। সুফিয়ার কোলে ৪ মাসের শিশু সুজন ঘুমাচ্ছে। সুফিয়া কান্না করছে এবং বিলাপ করছে কিভাবে সে তার এই অবোঝ শিশুটিকে নিয়ে দিন যাপন করবে। সে কান্না করছে এবং লাশ ফেরত পাওয়ার দাবী করছে। কান্না জড়িত কণ্ঠে সুফিয়া বলছে সোমবার রাতে তার স্বামী চন্ডি বাগানে গানের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। করম আলী ও সুজন তাকে খারাপ লাইনে নিয়েছে। আক্কল মিয়ার ভাই, বোন ও আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় একাধিকভার মোর্চা যায়।

করম আলীর দুই স্ত্রী। এক স্ত্রী থাকে বি-বাড়ীয়া জেলার বিশ্বরোড এলাকায়। সেখানে তার একটি মেয়ে রয়েছে। বাড়ীতে থাকা স্ত্রী ছফিনা বেগম সন্তান রাসেল (৮) ও রাশেদা(৬)কে নিয়ে কান্না কাটি করছেন। রাসেল ২য় শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। রাসের ও রাশেদা বুঝে উঠেনি তাদের বাবার কি হয়েছে। সন্তান হারিয়ে পিতা আজগর আলী নির্বাক। বোন জাহিমা কান্নায় লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। পাহাড়ে এই কান্নায় ছুটে আসেন প্রতিবেশীরাও। তাদের চোখেও ছিল কান্নার জল।

গাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা তাজুল ইসলাম জানান, করম আলীর বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ ছিল। এক বছর আগে তার বাড়ী ভেঙ্গে টিন অন্যদেরকে দিয়ে দেয়া হয়। তবে সুজন ও আক্কল মিয়ার বিরুদ্ধে আড়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, গত ৬ মাসে ভারতে এ ধরনের ঘটনায় ৬ জন মারা যায়। গত ১০ বছরে শিশু ও নারীসহ মারা যায় ২৫/৩০ জন। জনগনকে বারবার সচেতন করলেও তারা ভারতে গিয়ে বারবার ধরা পড়ে এই করুন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়। চুনারুঘাট থানার ওসি অমুল্য কুমার চৌধুরী জানান, এই মৃত্যুর ঘটনা সত্যিই মর্মান্তিক। ভারতের অংশে মৃত্যু হওয়ায় আমার কিছু করতে পারছি না।

বিজিবির ৪৬ ব্যাটালিয়নের সিইও লে. কর্ণেল নাছির উদ্দিন জানান, বারবার সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সচেতন করার পরও সীমানা অতিক্রম করে এধরনের মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া দুঃখ জনক। তবে বিএসএফকে বলা হয়েছে যদি কেউ অপরাধ করে তাকে যেন এভাবে না মেরে আইনের হাতে তুলে দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত সোমবার রাতে চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের আলী নগর গ্রামের আজগর আলীর ছেলে করম আলী (৪০), একই গ্রামের সমির হোসেনের ছেলে সুজন মিয়া (২২) এবং সনু মিয়ার ছেলে আক্কল মিয়া (১৯) ভারতে যান। সেখানে স্থানীয় জনতা তাদেরকে কুপিয়ে হত্যা করে। আহত অবস্থায় আক্কল মিয়া জীবন বাঁচাতে খোয়াই শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি হলে পওে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এলাকায় তারা ফিরে না আসায় মঙ্গলবার মুখে মুখে তাদের হত্যার কথা প্রচার হয় এবং বিজিবি ও পুলিশকে অবহিত করা হয়। সন্ধ্যার পর বিজিবি ও পুলিশ এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়।

উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল এ ধরনের এক ঘটনায় তিন জনকে পিটিয়ে হত্যা করে ভারতীয় জনতা।

(পিডিএস/পি/অক্টোবর ২৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test